মৃতকে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে কিনা - সেটি এখনো বলা যায় না। কারণ এই গবেষনার গবেষকরা মৃতকে বাঁচিয়ে তুলতে চাননি।
তাছাড়া মৃতের সংজ্ঞা কিন্তু পরিবর্তনশীল। আজকে আমরা যে অবস্থাকে মৃত বলে অভিহিত করছি,আগামী দিনে হয়তো সেটাকে স্রেফ একটা রোগ হিসেবেই ধরা হবে এবং তার চিকিৎসা করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে।
তবে একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, “মস্তিষ্কের কোষ” কে জাগানো আর “মস্তিষ্ক” কে জাগানো - দুটো কিন্তু এক কথা নয়।
“মস্তিষ্কের কোষ” কে জাগাতে হলে তাদেরকে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হবে যাতে তারা শক্তি উৎপাদন করে নিজেদের জীবিত রাখতে পারে।
কিন্তু “মস্তিষ্ক” কে জাগাতে হলে মস্তিষ্কের কোষ নিউরনগুলোর সংযোগস্থল তথা সিন্যাপ্সে শক্তি সরবরাহ করে তাদের মধ্যে পুনরায় এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে যাতে সেখানে “ইলেকট্রিক সিগন্যাল” উৎপন্ন হয়।
অর্থাৎ যখন মস্তিষ্কের কোন অঞ্চলের সমস্ত নিউরন পারস্পরিক একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং সেখান থেকে ক্রমাগত বৈদ্যুতিক সংকেত উৎপন্ন হয় তখনই আমরা মস্তিষ্ককে জাগ্রত বলি। গবেষকরা উৎপন্ন এই সংকেতকে যাচাই করেই মস্তিষ্কের চেতনাবস্থা যাচাই করেন ।
তার মানে,নিউরনের জাগরণ ও মস্তিষ্কের জাগরনে পার্থক্য হল - “একটি সমন্বিত নেটওয়ার্ক”। মস্তিষ্কের জাগরনে যা আবশ্যকীয় কিন্তু কেবল নিউরনের জাগরনে যা একদমই অনাবশ্যকীয়।
সম্প্রতি 17 এপ্রিল প্রকাশিত গবেষণায় ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা কেবল নিউরনকে জাগাতে চেয়েছেন। কারণ মৃত মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহের জন্য এর ভেতর দিয়ে রক্তের মতো যে তরল প্রবাহিত করা হয় তাতে তারা এমন একটি উপাদান মিশ্রিত করেন যা নিউরনগুলোকে “ইলেকট্রিক সংকেত” তথা “Consciousness” তৈরি করা থেকে বিরত রাখবে। শুধু তাই নয়, কোনোক্রমে যদি তারা এ সংকেত তৈরী করেও ফেলে তাহলেও তখন যাতে তাকে তৎক্ষণাৎ নিস্তেজ করে ফেলা যায় সেজন্য গবেষকরা পরীক্ষার সময় চেতনানাশক উপাদান হাতে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকেন। কারণ মস্তিষ্ক যদি তার চেতনা ফিরে পায় তাহলে তো তারা মৃত ও জীবিত এর মাঝখানে অবস্থান করবে,যা পরীক্ষণটির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে এবং “ডেথ গাইড প্রটোকল” এর আইন ভঙ্গ করতে পারে ।
যদিও পরীক্ষাকালীন সময়ে তারা এরকম কোন সিগনাল তৈরি হতে দেখেন নি। তবে কিছু নিউরনকে তারা পুনরায় সক্রিয় করতে পেরেছেন,যেগুলো কিছু জটিল কাজ যেমন - শক্তি উৎপাদন করা, বর্জ্য নিষ্কাশন করা,মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ গঠনকে মেইনটেইন করা - ইত্যাদি ফাংশন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু ভবিষ্যতে কি এটা সম্ভব?
এখানে একটা প্রশ্ন জাগে,এই পরীক্ষণে যদি সেই “সিগন্যাল” তৈরিতে বাধাদানকারী পদার্থটি ব্যবহার করা না হতো তাহলে কি নিউরনগুলো সেই সিগন্যাল তৈরি করতে পারতো?
গবেষকরা বলছেন,হয়তো বা পারতো । কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি তারা না-ও পারতো, তাহলেও যদি তাদের মধ্যে একটা “ইলেক্ট্রিক শক” দেওয়া হতো তাহলে হয়ত তারা নিশ্চিতভাবে সেই সংকেত তৈরিতে উঠে-পড়ে লাগতো। ফলে আপাতঃ “মৃত” হতেও তখন ছলছল করা প্রাণ ঠিকরে বেরিয়ে পড়তো।
কিন্তু কবে?
এর উত্তর পেতে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ওই সামনেই, ওই আগামীর দিনগুলোতে।
ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment