বিখ্যাত গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী মরিস জেসাপ আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এরপর তিনি “দ্য কেস ফর দ্য ইউএফও” নামে একটি বইও লেখেন। এই বিষয়ে তিনি আরও ব্যাপক গবেষণার দরকার আছে বলে মনে রাখতেন। ১৯৫৬ এর ১৩ জানুয়ারি তিনি একটি অদ্ভুত চিঠি পান যাতে লেখা ছিল, “১৩ বছর আগে মহাকর্ষ আর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম নিয়ে ইউএস সরকারের গবেষণার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। কাজেই আপনি এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না।“
ফিলাডেলফিয়া এক্সপিরেমেন্টে আসলে কি ঘটেছিল? অনেকেই ঘটনাটিকে গুজব বা বানানো গল্প বলে উড়িয়ে দিলেও আসলেই ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টে অদ্ভুতুড়ে কিছু একটা ঘটেছিল এ ব্যাপারে নিশ্চিত। সত্যিই কি জাহাজটি অদৃশ্য হয়েছিল? কেনইবা সরকার ২৮ অক্টোবর ১৯৪৩ এর পর পরীক্ষাটি বন্ধ করে দেয়? কেনইবা পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়? উউতর হয়তোবা কোনদিনই জানা যাবে না। কিংবা ভবিষ্যতে হয়তো আইনস্টাইনের মত কোন এক সুপার জিনিয়াস এই রহস্য উন্মোচন করবেন। উত্তরটা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।
এই পরীক্ষার অনেক নথি অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যতটুকু সম্ভব তুলে ধরলাম।
USS Eldridge (DE-173) ca. 1944
ফিলাডেলফিয়া পরীক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়া এলাকায় ইউএস নেভির ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস এল্ড্রিজে করা একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ; প্রোজেক্ট রেইনবো নামেও পরিচিত। ১৯৪৩ সালের ২৮ অক্টোবর তারিখে এই এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছিল যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শত্রুর চোখে জাহাজকে কিভাবে অদৃশ্য করা যায় তা পরীক্ষা করা।
আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই থিওরিতে মূলত বলা হয়েছে যে যদি কোনভাবে কোন স্থানে আলোকে বেধে ফেলা যায় এমনভাবে যে সেখান থেকে আলো বেরোবেও না ঢুকবেও না তাহলে পৃথিবীর সময়কেও বেধে ফেলা সম্ভব। ওই স্থানে মহাকর্ষ বলও বেধে ফেলা যাবে। আইনস্টাইনের এই তত্ত্বের ব্যবহারিক কোনো প্রমাণ নেই। কিছু গবেষকরা মনে করেন যে এই থিওরির মাধ্যমে বড় ইলেকট্রিক্যাল জেনারেটর ব্যবহার করে কোন নির্দিষ্ট বস্তুর চারপাশে আলোকে বেধে ফেলা সম্ভব এবং এতে করে ওই বস্তুটি সাধারণের কাছে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এটাকে সেনাবাহিনী বেশ গুরুত্ব দিয়েছিল আর এজন্যই এই গল্পের সৃষ্টি। এই গল্পটি অনেকভাবে বর্ণনা দেয়া হয়। মূল কাহিনীটি এমন,১৯৪৩ সালের গ্রীষ্মের দিকে ইউএস নেভি তাদের ডেস্ট্রয়ার এল্ড্রিজকে প্রস্তুত করে অদৃশ্য করার এই পরীক্ষাটির জন্য। এর চারপাশে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসানো হয় যাতে আলোকে বেধে ফেলা যায়। এই পরীক্ষাটি আংশিক সফল হয়েছিল। অক্টোবর ২২,১৯৪৩ এ একটি পরীক্ষা করা হয়।শোনা যায় এদিন এল্ড্রিজ প্রায় সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।অদৃশ্য হবার সময় এর চারপাশে সবুজাভ ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল।যখন এল্ডিজ পুনরায় দৃশ্যমান হয় তখন জাহাজে থাকা ক্রুদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা দেখা জায়,তারা বমিভাব অনুভব করে।কিছু ক্রু মারা যায় বলেও বলা হয়ে থাকে।এরপর নৌবাহিনীর অনুরোধে সরকার পরীক্ষাটি আবার অক্টোবর ২৮,১৯৪৩ এ করার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ প্রথমবার যন্ত্র সাজানোতে ভুল ছিল। দ্বিতীয়বার অক্টোবর এর ২৮ তারিখ পরীক্ষাটি করা হয়।এবার এল্ড্রিজ শুধু চোখের সামনেই অদৃশ্য হল না, জায়গাটি থেকেই টেলিপোর্টের মাধ্যমে অদৃশ্য হয়ে নরফোক,ভার্জিনিয়াতে পৌছায়।এবার অদৃশ্য হবার সময় নীল আলো দেখা যায়।ওই স্থান হতে ২০০ মাইল (৩২০) কিমি দূরে ছিল নরফোক।এটা বলা হয়ে থাকে যে নরফোকে এসএস আন্ড্রু ফুরুসেইথ নামক জাহাজের সামনে এটি কিছু সময় সম্পূর্ণ দৃশ্যমান ছিল,এরপর এতি পুনরায় যে স্থান হতে অদৃশ্য হয়েছিল ঠিক সেই স্থানেই ফিরে আসে।প্রচলিত আছে যে এই ভ্রমণের সময় ছিল ১০ সেকেন্ড। ক্রুদের সাইড ইফেক্ট ছিল এ ঘটনার পর প্রচণ্ড রকমের। অনেকে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান ,অনেকে পাগল হয়ে জান,আবার অনেকেই পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যান এবং আর ফিরে আসেন নি বলে শোনা যায়। এমনও শোনা যায় যে কিছু ক্রু নাকি এই ঘটনার পর কিছু অবিশ্বাস্য ক্ষমতা লাভ করেন,যেমন যে কোন কিছু ভেদ করে চলে যাবার ক্ষমতা। এই গুজব আসে যে যেসব নাবিক এই পরীক্ষার পর বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছিল তারা স্বীকার হয় ব্রেইনওয়াশের,যার ফলে তাদের পরবর্তীকালে এই পরীক্ষার কথা আর মনে ছিল না।
ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে সবচেয়ে রহস্যপূর্ণ জিনিসটি ঘটে মরিস কে জেসাপ এবং কার্লোস মিগুয়েল আলেন্ড কে নিয়ে। এই এক্সপেরিমেন্টের কথা কখনই সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় নি। কিন্তু কথাগুলো একান ওকান হয়ে সাধারন জনগন জেনে গেল কিভাবে যেন।এটা নিয়ে লেখালেখি শুরু হল পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বইপত্রে। সবাই এর সত্যতা জানতে চায় সরকারের কাছে। এর উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেন জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, লেখক এবং এক্সপ্লোরার মরিস জেসাপ। তিনি অনেক ঘুরেফিরে রিসার্চ করে ইউ এফ ও এর উপর একটা বই প্রকাশ করেন যার নাম 'দ্যা কেস ফর দ্যা ইউ এফ ও'। তিনি মনে করতেন ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। ১৯৫৬ এর ১৩ জানুয়ারি জেসাপ হঠাৎ একটা অদ্ভুত চিঠি পান মিগুয়েল আলেন্ড নামক একজনের কাছ থেকে। আলেন্ড ছিলেন পাগলাটে এক নাবিক। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাবিক হিসেবে নাম করেন। আলেন্ড ছিলেন ইউ এফ ও সম্পর্কে আগ্রহী। আলেন্ড তাকে ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করতে অনুরোধ করেন। আলেন্ড তার চিঠিতে লিখেছেন '১৩ বছর আগে মহাকর্ষ আর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম নিয়ে ইউ এস সরকারের গবেষণার ফলাফল ছিল ভয়াবহ।'
তথ্যসূত্র:
No comments:
Post a Comment