কেন ভালো মানুষেরা খারাপ কর্মে লিপ্ত হয়?কেন এক শ্রেণীর সভ্য,সুশীল মানুষেরা আরেক শ্রেণীর মানুষদের মর্মাহত করে,আঘাত করে?এর কারণ কী?
সমাজ বিজ্ঞানী ফিলিপ জিম্বার্দো(Philiph Zimbardo) তার জীবনের ৪০ বছর কাটিয়েছেন এসব "কী এবং কেন"-এর জবাব খুঁজতে এবং তিনি মনে করেন তিনি এসবের জবাব পেয়েছেনও।
লুসিফার ইফেক্ট(Lucifer Effect) মূলত ঈশ্বরের অনুগ্রহকারী দেবদূতের নামে নাম দেওয়া হয়েছে। এই তত্ত্ব মূলত ভাল মানুষ কীভাবে ভয়ঙ্কর কাজ করতে পারে সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ করে।
লুসিফার ইফেক্টের একটি মূল উপাদান হ'ল অমানবিকরণ(Dehumanitization)। এটা হল যখন কিছু মানুষ অন্য মানুষদের 'মানুষ' বলে গণ্য করে না এবং তাদের সহমর্মিতা বা সমবেদনার যোগ্য মনে করে না । লুসিফার ইফেক্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ'ল "সঙ্গতির জন্য আকাঙ্ক্ষা(Desire for Conformity)।
আপনার চারপাশের অন্যরা যখন খারাপ কাজে লিপ্ত হয় তখন আপনিও ওদের সাথে সঙ্গতি বা খাপ খাইয়ে নিতে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেন।
এবার ওনার একটা কৌতূহলোদ্দীপক এক্সপেরিমেন্টের সম্পর্কে জানা যাক।১৯৭১ সালে তিনি একটি কৃত্রিম কারাগার তৈরি করে গবেষণা করেন এবং ২০০৩ সালে আবু গারিব(Abu Ghraib) কারাগারে বন্দীদের নির্যাতনের বিষয়টিও পরীক্ষা করেন, যার ফলাফল স্ট্যানফোর্ড পরীক্ষার সাথে মিল রয়েছে।
The Stanford Prison Experiment
১৯৭১ সালে, জিম্বার্দো স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ অধ্যাপক ছিলেন এবং ক্রিস্টিনা মাসলাচ নামে তার এক স্নাতক শিক্ষার্থীর সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিলেন ।তিনি ক্ষমতা গতিবিদ্যা(power dynamics) এবং সামাজিক ভূমিকা মানুষের আচরণকে কিভাবে প্রভাবিত করে সে বিষয়ে অধ্যয়ন করতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি স্টানফোর্ডের জর্ডান হলের বেসমেন্টে একটি জাল বা মেকী কারাগার তৈরি করেছিলেন এবং ২৪ জন কলেজ ছাত্রকে 'বন্দী' এবং 'রক্ষী' হিসাবে বিভক্ত করেছিলেন। পরিকল্পনাটি ছিল মূলত দুই সপ্তাহের জন্য। 'কারাগারে' থাকার সময় জিম্বার্দো এবং তার সহকর্মীরা বন্দী এবং রক্ষীদের আচরণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা আশা করেছিল যে তথ্যগুলি তাদের বাস্তব কারাগারের সূক্ষ্মতা বুঝতে সহায়তা করবে।
জিম্বার্দো আগে থেকেই রক্ষীদের বলেছিলেন বন্দীদের কোনো শারীরিক অত্যাচার না করতে। পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন, বন্দীরা বিদ্রোহ করেছিল এবং রক্ষীরা তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে চূড়ান্ত কৌশলগুলি ব্যবহার করতে শুরু করেছিল যেমন বিভিন্ন সময়ে তাদের মাথা কাগজের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে, উলঙ্গ করে তাদের দিয়ে খালি হাতে টয়লেট পরিষ্কার করতে বাধ্য করতো । পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। বন্দীদের মধ্যে অনেকের ট্রমার মারাত্মক লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে । সেজন্য বন্দীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দিতে হয়েছিল।
এসব বিষয় লক্ষ্য করা সত্ত্বেও জিম্বার্দো এবং তাঁর সহ-গবেষকরা উভয়ই এই পরীক্ষা প্রথম দিকে বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা করেননি; যাইহোক, পঞ্চম দিন, মাসলাচ(তার গার্লফ্রেন্ড এবং শিক্ষার্থী) ঐ কারাগার পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। তিনি যা দেখেছিলেন সে সম্পর্কে সতর্ক করে জিম্বার্দোকে বলেছিলেন, 'আমি মনে করি আপনি এই ছেলেদের প্রতি যা করছেন তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং হীন!' তাদের দুজনের মধ্যে তর্ক হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত জিম্বার্দো মাসল্যাচের সাথে একমত হয়েছিলেন যে এই পরীক্ষাগুলি বন্দী এবং রক্ষীদের ক্ষতি করছে, এবং ষষ্ঠ দিনে (আট দিন আগে) তিনি এই পরীক্ষাটি সমাপ্ত করলেন।
পরে, জিম্বার্দো এই গবেষণার জন্য নিজের ভুল বুঝে স্বীকৃতি দিয়ে লিখেছিলেন, 'আমি আমার ভুল এবং অকার্যকর সিদ্ধান্তের জন্য দোষী ছিলাম,পাপী ছিলাম ... এর জন্য আমি দুঃখিত।"
এমনকি মাসলাচও খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন; তিনি যখন প্রথম স্ট্যানফোর্ড কারাগার পরীক্ষাটি দেখেছিলেন তখন তিনি কিছু বলতে চান কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না, কারণ অন্য গবেষকরা কিছুই ভুল হচ্ছে বলে ভাবেননি।এবার মনে করুন প্রথমে কি বলেছিলাম,লুসিফার ইফেক্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ'ল "সঙ্গতির জন্য আকাঙ্ক্ষা(Desire for Conformity)।
আপনার চারপাশের অন্যরা যখন খারাপ কাজে লিপ্ত হয় তখন আপনিও ওদের সাথে সঙ্গতি বা খাপ খাইয়ে নিতে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেন।
ফিলিপ জিম্বার্দো এই বিষয়ে ২০০৭ সালে একটি বই প্রকাশ করেন যা"The Lucifer Effect: Understanding How Good People Turn Evil" নামে পরিচিত।এবং বইটি ২০০৮ সালে William James Book Award পায়।
বিঃদ্রঃ এই একটি উত্তরে পুরো ব্যাপারটি আসলে পরিষ্কার বুঝানো সম্ভব না। এটা নিয়ে আমারও আরো জানার আছে।বিষয়টি কখনো আরো পরিষ্কার হলে বিস্তারিত লিখব।
ধন্যবাদ
তথ্যনির্ভরতাঃ
No comments:
Post a Comment