অনুসরণকারী best

Translate

Followers

04/08/2020

চুল পড়া



চুল পড়া (অ্যালোপেশিয়া)


চুল আংশিক ভাবে বা সম্পূর্ণভাবে পড়ে গেলে তাকে চুল পড়া বলে। চুল পড়া ধীরে ধীরে হয় বা বেমানান ভাবে হতে পারে বা সবটাই চলে যেতে পারে।
একজন মানুষের মাথা থেকে প্রত্যেকদিন ১০০ টির মতো করে চুল পড়ে যায়।
টাক সাধারণত কোনো রোগের দ্বারা সৃষ্ট না হয়। এটি বয়স বৃদ্ধি,বংশগতি বা হরমোন পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। পুরুষ ধরনের বা মহিলা ধরনের টাক হতে পারে।
চুল পড়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। নিম্নলিখিত কারণগুলি হল :
চুলের রোগ
বংশগতভাবে পাতলা হওয়া বা টাক পড়া  :এটিকে এন্ড্রজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া বা টাক বলা হয়। এটিকে চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।পুরুষদের ক্ষেত্রে বংশগতভাবে টাক পড়া দেখা যায়, চুলের রেখা বরাবর চুল কমে যাওয়া, এর সঙ্গে মাথার চামড়ার উপর অংশে চুল পড়ে যায়। অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে চুলের রেখা ঠিক থাকে এবং সামনে ও মাথার উপরে চুল পাতলা হতে থাকে।
অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা : এটি একটি স্বঅনাক্রম্যতা যুক্ত রোগ যার ফলে মাথায় ও শরীরের অন্যান্য অংশে চুল উঠে যায়। এটি সকল বয়সের লোকেদের মধ্যে দেখা যায়, শরীরের কিছু কিছু অংশে চুল পড়ে যায়।
সিকাট্রিসিয়াল (দাগযুক্ত) অ্যালোপেশিয়া : স্বাস্থ্যবান পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে এটি দেখা যায়। সিকাট্রিসিয়াল এলোপেশিয়া খুবই বিরল ঘটনা যাতে চুলের গ্রন্থিগুলি নষ্ট হয়ে যায়। যেখানে চুলের গ্রন্থিগুলি থাকে সেখানে দাগযুক্ত কোষ গঠিত হয় এবং পুনরায় বৃদ্ধি আর হয় না। চিকিৎসার ফলে প্রদাহ বন্ধ হয় যা চুলের গ্রন্থিগুলিকে নষ্ট করে দেয়।
অবলম্বন সরূপ চিকিৎসা ব্যবস্থা : বেশি করে চুল পড়াকে প্রায় ৩০ টি রোগের সতর্কতা সংকেত হিসাবে দেখা হয়। মূল রোগগুলির চিকিৎসার দ্বারা চুল পড়া বন্ধ করা বা কমানো যেতে পারে। থাইরয়েড রোগ এবং লৌহ জাতীয় খনিজের অভাবে রক্তাল্পতা হলে এই অবস্থায় চুল পড়তে পারে।
কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসার ফলে : রেডিয়েশন থেরাপি এবং কিছু কেমোথেরাপি  চিকিৎসার ফলে চুল পড়ে যায়। এই চুল উঠে যাওয়া ক্ষণস্থায়ী হয়, এটি এই থেরাপির সবচেয়ে পীড়াদায়ক অংশ।
মাথার চামড়ার উপরে দাদ হলে : ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ থেকে চুল পড়তে পারে। এটি সাধারনভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে হয় যার ফলে মাথার উপরের চামড়াতে টাক পড়া বা দাগ হয়ে যেতে পারে।
ট্রিকোটিলোম্যানিয়া : এটি একটি অসুখ যাতে মানুষ্ বারবার নিজের চুল ছিঁড়ে আনে। মাথার চামড়ার উপরের অংশ থেকে চুল ছিঁড়ে ফেলা ছাড়াও, রোগীরা তাদের চোখের পাতার চুল, নাকের চুল, ভ্রু এবং শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে চুল ছিঁড়ে আনতে বাধ্য হয়।
চাপ ও হরমোন
চাপ : যদি কোনো ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিক চাপে থাকে চুল উঠে যেতে পারে। বড় অস্ত্রপ্রচারের পর, তীব্র জ্বর, তীব্র সংক্রমণ বা ফ্লু এর পরেও চুল পড়ে যেতে পারে।
হরমোন বেশি-কম হলে : বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনের মাত্রার কোনো পরিবর্তন হলে চুল পড়ে যেতে পারে। মেনোপজ ও শিশু জন্মদানের পর ইস্ট্রজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে চুল পড়ে যাওয়া সাধারনত হয়। ইস্ট্রজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে চুল পড়ে গেলে , এই পড়ে যাওয়া ক্ষনস্থায়ী হয়, চুল আবার বেড়ে যায়।
খাদ্য
ওজন হ্রাস : ওজন সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে লোকেদের চুল পড়ে যেতে পারে।এই চুল পড়ে যাওয়া খুবই সাধারন ঘটনা, ঠিকমত খাবার খেলে এবং ওজন ঠিক হলে চুল আবার ফিরে পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ এর মাত্রা বেশি হলে : ভিটামিন পরিপূরক খাবার বা ওষুধের মাধ্যমে বেশি মাত্রায় ভিটামিন এ নিলে চুল পড়ে যেতে পারে।
কম মাত্রায় প্রোটিন  গ্রহন : যখন শরীর ঠিকমতো প্রোটিন না পায় চুল পড়ে যেতে পারে , কারন চুলে প্রতিন সংরক্ষিত থাকে, এর ফলে চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এই অবস্থার ব্যক্তি দৃশ্যমানভাবে চুল পড়ে যাওয়া দেখে। ঠিকমত প্রটিনযুক্ত খাবার খেলে এটি বন্ধ ও প্রতিরোধ করা যায়।
কম পরিমান লৌহ জাতীয় খাবার গ্রহন : খুব কম পরিমান লৌহ জাতীয় খাবার গ্রহন করলে চুল পড়ে যেতে পারে। লৌহের সবজি জাতীয় উৎস হল লৌহযুক্ত দানা শস্য , সয়াবিন, কুমড়ো বীজ, বিনস, মসূর দল ও পালং শাক। লৌহের প্রাণী জাতীয় উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বড়গুলি হল ঝিনুক,গুগলি ও প্রাণীর মাংস।
খাদ্যজনিত অসুখ : খাদ্যজনিত অসুখ যেমন অ্যানোরেক্সিয়া বা বুলিমিয়ার ফলে চুল পড়ে যেতে পারে।
ঔষধের ব্যবহার
ঔষধের ব্যবহারের ফলে চুল পড়ে যেতে পারে , যেমন
রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার ফলে
ভিটামিন এ এর মাত্রা বেশি হলে
আর্থ্রাইটিস, মানসিক অবসাদ, গেঁটে ব্যাট, হৃদপিন্ডের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খেলে।
জন্ম নিরোধক বড়ি : কিছু মহিলার ক্ষেত্রে জন্ম নিরোধক বড়ি খেলে বা খেতে খেতে বন্ধ করে দিলে চুল পড়ার ঘটনা ঘটে। সাধারনত মহিলাদের ক্ষেত্রে এর ফলে চুল পাতলা হতে দেখা যায়।
বারংবার চুল পরিচর্যা করার ফলে
চুলের কসমেটিকস : চুলে বারংবার রং করার ফলে চুল ভেঙ্গে যায়। প্রাত্যহিক বা সঠিকভাবে রং , জেল, রিলাক্সার এবং স্প্রে ব্যবহার করা না হলে চুল ভেঙ্গে যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞরা চুলের ভেঙ্গে যাওয়া বন্ধ করার জন্য এইসব কসমেটিকস কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
চুল শুকনো করার যন্ত্র , চুল সোজা করার জন্য ইস্ত্রির ব্যবহার এবং এই ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার : প্রত্যেকদিন চুল শুকনো করার যন্ত্রের ব্যবহার চুলের ক্ষতি করে।  চুল শুকনো করার যন্ত্রের উচ্চ তাপমাত্রা চুল স্তম্ভের জলকে শুকিয়ে দেয় ফলে চুল ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং ভেঙ্গে যেতে থাকে। এই বিপদ এড়ানোর জন্য চুল হওয়ায় শুকনো করা এবং শুকনো অবস্থায় হকাল বাঁধা বা অন্যান্য বিন্যাস কর উচিত। ত্বক  বিশেষজ্ঞরা চুল সোজা করার জন্য ইস্ত্রী যেটি খুব উচ্চ তাপমাত্রায় চুল সোজা করে এবং অন্যান্য যন্ত্র খুব কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
চুলের কাঁটা, ক্লিপ এবং রাবার ব্যান্ড : যদি চুল শক্তভাবে চুলের কাঁটা, ক্লিপ বা রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা থাকে তবে চুল ভেঙ্গে যেতে পারে। এই চুল ভেঙ্গে যাওয়া কমানোর জন্য ক্লিপ হালকাভাবে বাঁধতে হবে এবং মাথার বিভিন্ন জায়গায় লাগাতে হবে যাতে কোনো নির্দিষ্ট জায়গার চুল ভেঙ্গে না যায়।
খুব বেশী বা জোরপূর্বক সাজগোজ : প্রত্যেকদিন শ্যাম্পু করা, চুল আঁচড়ানো বা চুলে ব্রাশ করা (একদিনে ১০০ বার বা তার বেশী) বা এগুলি কোনো একটি জোরপূর্বক করলে চুল ভেঙ্গে যেতে পারে।  যখন চুল ভেঙ্গে যায় তখন চুল রুক্ষ্ম লাগে বা বেশি পাতলা লাগে।
ত্বক বিশেষজ্ঞরা চুল পড়ে যাওয়া রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে পারেন। একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ভালোভাবে মাথার খুলি পর্যবেক্ষন করতে পারেন তার অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য।
রোগের কারণের উপর নির্ভর করে চুল পড়ে যাওয়ার চিকিৎসা করা হয়.
কোনো প্রেসক্রিপশান ছাড়া যে চিকিৎসাগুলি করা হয় তা হল
মিনোক্সিডিল : এই ওষুধ মাথার উপরের চামড়াতে প্রয়োগ করা হয়।  এটি চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বন্ধ করা এবং চুলের উপরের চামড়াতে চুলের বৃদ্ধি হতে উদ্দীপিত করে। এটিই একমাত্র চুলের  পূর্ণ বৃদ্ধি করার ওষুধ যেটি পুরুষ ও মহিলা উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন।
লেজার যন্ত্র : ব্রাশ, চিরুনি বা অন্যান্য হাত দ্বারা ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র যেগুলিতে লেজার আলো বের হয় সেগুলি চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই যন্ত্রগুলি ব্যবহার করলে চুল বেশি সজীব লাগে। এফ ডি এ এই সকল যন্ত্রগুলিকে চিকিৎসা দ্রব্য হিসাবে মেনে নিয়েছে , এই যন্ত্রগুলি কঠোরভাবে চিকিৎসার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।  এই যন্ত্রগুলির দূরবর্তী ফলাফল বা ব্যবহার নিরাপদ কিনা তা এখনো জানা যায় নি।
প্রেসক্রিপশান করা ওষুধ
ফিনাস্টেরাইড : এটি  এফ ডি এ অনুমোদিত ওষুধ যেটি পুরুষদের ক্ষেত্রে চুল পড়ে যাওয়ার  চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি বড়ি আকারে পাওয়া যায় এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে (প্রায় ৮৮ % ক্ষেত্রে) ধীরে ধীরে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় সাহায্য করে। ফিনাস্টেরাইড পুরুষদের শরীর থেকে একটি হরমোন ডিহাইড্রটেস্টস্টেরণ (ডি টি এইচ)নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়।
কর্টিকোস্টেরয়েড : যদি শরীরে প্রদাহের কারনে চুল পরে যায় , তবে ত্বক বিশেষজ্ঞ মাথার উপরের চামড়াতে একটি ওষুধ ইনজেকশন করে দেন, একে বলে কর্টিকোস্টেরয়েড।  যখন কোনো মানুষের অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা থাকে তখন এটি তার প্রদাহ বন্ধ করে দিতে সাহায্য করে।  একটি বিজারনধর্মী স্টেরয়েড থেকে  কর্টিকোস্টেরয়েড আলাদা হয়।
পদ্ধতি
একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ আপনার কত চুল পড়ে গেছে তার পরিমানের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।  ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ নিন্মলিখিত পদ্ধতিগুলির একটি বা তার বেশি ব্যবহার করতে পারেন।
চুল প্রতিস্থাপন : মাথার উপরের চামড়ার যেখানে ভালো চুলের বৃদ্ধি আছে সেটিকে তুলে ফেলা এবং মাথার উপরের চামড়ার যে জায়গায় চুলের প্রয়োজন আছে সেখানে প্রতিস্থাপন করা।
মাথার উপরের চামড়া কমানো : টাকযুক্ত চামড়াকে অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা এবং চুলযুক্ত চামড়াগুলিকে কাছাকাছি আনা যাতে মাথার টাক অংশ কমিয়ে দেওয়া যায়। এই চামড়া কমানোর জন্য অস্ত্রোপ্রচার এককভাবে বা চুল প্রতিস্থাপন করার সঙ্গে যুগ্মভাবে করা যায়।
মাথার উপরের চামড়ার প্রসারণ : ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য চামড়ার নিচে যন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়ে চামড়া প্রসারিত করা হয়। এই পদ্ধতি মাথার চামড়া কমানোর আগে ব্যবহার করা হয় যাতে চামড়া নমনীয় হয়।  এটি এককভাবেও ব্যবহার করা হয় চুল যুক্ত চামড়াকে প্রসারিত করে টাক কমানোর জন্য।

চামড়ার ফ্ল্যাপ : মাথার উপরের চামড়ার চুলযুক্ত অংশকে অস্ত্রোপ্রচারের দ্বারা সরিয়ে ফেলা এবং যেখানে চুল প্রয়োজন সেই অংশে লাগিয়ে দেওয়া

ফেসবুকটি বিনামূল্যে নয়

Welcome our bloge   ফেসবুকটি বিনামূল্যে নয়  আমাদের ব্লগa স্বাগতম   ফেসবুক নিখরচায় নয় ইন্টারনেটের অনেকাংশের অর্থনীতি দুটি মূল্যবান সামগ্রী...

Search This Blog

Labels