অনুসরণকারী best

Translate

Followers

04/08/2020

কোকা-কোলা কী দিয়ে বানানো হয়? অনেকেই শূকরের রক্ত মেশানো হয় বলে থাকে। এটা কি সত্যি?

কোমল পানীয় পেপসি এবং কোকাকোলা নিয়ে মিথ্যাচার করতে গিয়ে আমরা নিজেদের মূল্য কতটুকু কমিয়েছে, ভেবে দেখেছেন কখনো? হ্যাঁ, যেহেতু এটা তৃতীয় শ্রেণীর টপিক। তাই ব্যাপারটাকে পাত্তা না দেয়াই স্বাভাবিক।

গত কয়েকবছর যাবৎ পেপসি এবং কোকাকোলা নিয়ে নেতিবাচক অনেক কথা শুনেছি। ফেসবুকেও মানুষকে দেখেছি ঢালাওভাবে সচেতনতামূলক পোস্ট শেয়ার করতে। কেউ বলছে, কোক পেপসিতে নাকি শূকরের রক্ত মেশানো হয়। কেউ বলছে, মানুষের রক্তও মেশানো হয়। আবার কেউ কেউ রীতিমত ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন, পেপসি নাকি একটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান ! তাই তারা পেপসি বর্জন করেছেন।

যতট‍ুকু মনে পড়ে, এই ইস্যুটার সময় বড় বড় কিছু ফেসবুক পেজে পেপসি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান PepsiCo কে ‘ইসরায়েলের সাহায্যকারী’ প্রতিষ্ঠান বলা হয়েছে। সেখানে PEPSI এর পূর্ণাঙ্গ রুপ হিসেবে দেখানো হয়েছে, Pay Each Penny to Save Israel !

অন্যদিকে Cola-Cola এর লোগো নিয়ে বলা হয়েছে, এটা উল্টো করে ধরলে যা আসে, তা আরবীতে পড়লে আল্লাহ পাক এবং মহানবী (সাঃ) কে অস্বীকৃতি জানানো হয়।

এরপরই শুরু হয় ব্যাপক হইহুল্লোড়। দেশের আনাচে কানাচে মসজিদ মাদ্রাসার হুজুররা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে কোক পেপসির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। তারপর যা হবার কথা, তার ফলাফল এখনো চলমান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পেপসি খাচ্ছি। পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, ‘ভাই আপনি কি মুসলমান?’

এবার একটু ভেতরে যাওয়া যাক !

Pepsi ও Coca-Cola এর উৎপত্তি আমেরিকায়। পেপসির নামকরণ করা হয় ১৮৯৮ সালে। তখন ইসরায়েল বাঁচানোর মতো কোনো ঘটনা বা প্রেক্ষাপট পৃথিবী দেখেনি। Pepsi নামটি এসেছে Pepsin নামক একটি এনজাইমের নাম থেকে, এটা ছিলো পেপসিতে ব্যবহার করা সে সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। পেপসিন একটি গ্রিক শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হজম করা।

১৯৬৬ সালে পেপসিকো (PepsiCo) যখন ইসরায়েলে তাদের শাখা খুলতে চেয়েছিলো, তখন মধ্যপ্রাচ্য ছিলো তাদের বড় একটি বাজার। ইসরায়েলে শাখা খুললে মধ্যপ্রাচ্যের ৪০টি দেশ তাদের বাণিজ্য বয়কট করতে চায়। তখন কোনো এক সূক্ষ্ম বুদ্ধিওয়ালা আদমির মাথা থেকে Pepsi নামের ব্যাখ্যা হিসেবে আসে Pay Each Penny to Save Israel ! জনবিক্ষোভের মুখে একসময় তারা বাধ্য হয় ইসরায়েল থেকে ব্যবসায় সরিয়ে আনতে। আজ মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পানীয়গুলোর মধ্যে মাক্কাকোলার পরেই পেপসির অবস্থান। উৎস ছাড়া এই নামটি আমাদের মুখে মুখে রয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৮৮৬ সালে আমেরিকায় Coca-Cola প্রথম উৎপন্ন হয়। কোকাকোলা তৈরির প্রথম উপাদান ছিল Cocaine আর Caffeine। কোকেন পাওয়া যায় Coca পাতা থেকে আর Caffeine পাওয়া যায় Kola Nut থেকে। সেই Kola থেকে Cola নাম এসেছে। কোকাকোলার মার্কেটিং ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক রবিনসন (Frank Robinson) এ নামটি রাখেন। লোগো ডিজাইনটিও তিনিই তৈরি করেন। ফ্রাঙ্ক রবিনসন তার সারাজীবন আমেরিকায় কাটিয়েছেন। তিনি ছিলেন খুবই স্বল্পশিক্ষিত। আরবী জানার সম্ভাবনা তার মধ্যে নেই। আরবীকে উল্টো করে লিখে ইসলাম অবমাননা করতে হলেও সেজন্য প্রচুর জ্ঞানী এবং পন্ডিত টাইপের কাউকে প্রয়োজন। যেখানে আপনার আমার মত সাধারণ মানুষ আরবী হরফ চিনলেও উচ্চারণ করতে বারোটা বেজে যায়। অর্থ বোঝা তো দূরের কথা !

যাই হোক, ১৯৪৯ সালে কোকাকোলা ইসরায়েলে তাদের বোতল তৈরির ফ্যাক্টরি চাল‍ু করেছিলো। এ নিয়ে কূটনৈতিক কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তখন কোকাকোলা বয়কট করা হয়।

পেপসি এবং কোকাকোলা নিয়ে ছড়ানো তথ্যটি যে একটি মিথ্যাচার, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সহ আরো অনেক জার্নাল ঘেঁটে দেখেছি। বিষয়টির পক্ষে বিপক্ষে আলোচনাকারী বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে উপাত্ত জোগাড় করেছি। কোকাকোলা এর লোগোর ইতিহাস পড়ে দেখলাম, এট‍া আসলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়। লোগোটি যে বানিয়েছে, সেই ফ্রান্স রবিনসনের জীবনীও পড়লাম। ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, পেপসি এবং কোকাকোলার যে অপবাদটা দেয়া হয়েছে, তার কোন শিকড়ই নেই। অনেকে এই মিথ্যাচারের পক্ষে লিখতে গিয়ে রেফারেন্স হিসেবে কিছু নিউজ লিংক দিয়েছে। লিংকে ঢুকলে দেখা যায়, সেখানে এরকম কিছুই বলা হয়নি। আর দুয়েকটা নিউজ লিংক পাওয়া যাবে, যেগুলো কোনো প্রতিষ্ঠিত নিউজ সাইট নয়। আমাদের দেশের অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোর মত তৃতীয় শ্রেণীর ব্যক্তিগত সাইটগুলো থেকে এটা ছড়ানো হয়েছে। যার কোনো অথেন্টিসিটি বা ভেরিফাইড সোর্সই নেই ! আসলে, মিথ্যার কোনো শেঁকড় থাকে না। শুধ‍ু অজস্র শাখা প্রশাখা থাকে ! প্রবাদটা ঠিকই ছিলো।

কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থে এভাবেই আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও ইসরায়েল প্রতিষ্ঠাকে “অতিথিকর্তৃক জমি দখল” এবং আমেরিকার পুঁজিবাদকে “সাম্রাজ্যবাদের” সাথে তুলনা করি। কিন্তু অপরাধীর ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেই না। এসব মিথ্যাচার আমাদের ধর্মকে ছোট করছে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে ‍মুসলমানরা পরিণত হচ্ছেন হাসির পাত্রে !

যার ফল হিসেবে ইসলামিক তথ্যের ডাটাবেজ ‘উইকি ইসলাম’ নামক ওয়েবসাইটেও আজ Muslim Conspiracy Theories বা ‘মুসলমানদের বানানো চক্রান্ত’ নামক আর্টিকেল স্থান পায় !

সূত্রঃ পেপসি এবং কোকাকোলা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক ‘ধর্মীয়’ মিথ্যাচার

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটলান্টা জার্নাল কনস্টিটিউশনের ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় একটি ছবি ছাপানো হয়। ছবিতে মেলে ধরা একটি বইয়ে ওই ফর্মুলা লেখা ছিল যা পেমবারটনের হুবহু বলে দাবি করা হয়।

গোপন ফরমুলার উপাদানগুলো হল- কোকার ৩ ড্রামস ইউএসপি তরল নির্যাস, সাইট্রিক অ্যাসিড ৩ আউন্স, ক্যাফেইন ১ আউন্স, চিনি ৩০ (একক উল্লেখ নেই), পানি ২ দশমিক ৫ গ্যালন, লেবুর জুস ২ পাইন্টের কিছু বেশি (১ পাইন্ট = ব্রিটিশ ৫৬৮ এমএল, মার্কিন ৪৭৩ এমএল), ভ্যানিলা ১ আউন্স, কারামেল (পোড়া চিনি) দেড় আউন্স এবং রং ও ৭ঢ এর ফেভার। রেসিপিতে আরও আছে- অ্যালকোহল ৮ আউন্স, কমলার তেল ২০ ফোঁটা, লেবুর তেল ৩০ ফোঁটা, জায়ফলের তেল ১০ ফোঁটা, ধনে পাতার রস ৫ ফোঁটা, নেরুলি তেল ১০ ফোঁটা এবং দারুচিনির নির্যাস ১০ ফোঁটা।

সূত্রঃ বিডিনিউজ

এক ক্যান কোক (১২ ফ্লুইড আউন্স/৩৫৫ মিলিলিটার)-এ ৩৯ গ্রাম শর্করা (সম্পূর্ণটাই চিনি থেকে) থাকে। এছাড়া থাকে ৫০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ০ গ্রাম চর্বি, ০ গ্রাম পটাশিয়াম, এবং ১৪০ ক্যালরি।

[১৩]

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

শুরুতেই আসা যাক জনপ্রিয় এই পানীয়টির আবিষ্কারকের কথায়। জন স্মিথ পেমবার্টন কোকাকোলার আবিষ্কারক। তিনি ছিলেন একজন হাতুড়ে ডাক্তার এবং ছোটখাটো রসায়নবিদ।

কোকাকোলা আবিষ্কারের গল্প: দিনটি ছিল ১৮৮৬ সালের ৮ মে। প্রথম চেষ্টায় পেমবার্টন এক ধরনের ওষুধ বা সিরাপ তৈরি করেন, যেটি কিনা প্রতি গ্লাস ৫ সেন্ট করে বিক্রি করা হতো। মাথাব্যাথা ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে আমেরিকার মানুষ এই সিরাপ খেত৷ পরে নতুন আরও অনেক রাসায়নিক যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে আজকের কোকাকোলা। দ্বিতীয় ধাপে এসে পেমবার্টন সেই সিরাপ এর সঙ্গে কোকো গাছের পাতার নির্যাস মিশিয়ে নতুন এক ধরনের পানীয় তৈরি করেন। যার নাম দেন ‘ভিন মারিয়ানি’। এটি ওষুধের দোকানে নার্ভ সতেজ রাখার টনিক হিসেবে বিক্রি করা হত। কিন্তু পেমবার্টন চেয়েছিলেন এমন কোনও পানীয় তৈরি করতে যেটি পান করলে একই সঙ্গে তৃষ্ণা নিবারণ ও শরীর-মনে চনমনে ভাব চলে আসে।

পেমবার্টন আগে থেকেই জানতেন যে, আফ্রিকার মানুষ তৃষ্ণা নিবারণ ও শরীর চনমনে রাখতে কোলাগাছের বাদাম চিবিয়ে খায়। তাই তিনি এবার তার সেই যুগান্তকারী পানীয় আবিষ্কারের জন্য সেই কোলাগাছের বাদামের দিকে মনোযোগ দেন। পেমবার্টন তাঁর ল্যাবরেটরিতে কোলা গাছের বাদাম পরীক্ষা করে দেখেন তাতে রয়েছে ক্যাফিন ও থিওব্রোমিন। এই দুটির মিশ্রণে তৈরি পানীয়টি স্টিমুল্যান্ট বা উত্তেজক ওষুধের মতো কাজ করে। পেমবার্টন তাঁর আগে তৈরি সিরাপের সঙ্গে কোলা গাছের বাদামের গুড়া, চিনি এবং কিছু সুগন্ধি দ্রব্য মেশান। তারপর সেই মিশ্রণ থেকে বুদবুদ উঠতে থাকে এবং এক ধরনের গাঢ় পানীয় তৈরি হয়। উচ্ছ্বসিত পেমবার্টন একদিন তাঁর আবিষ্কৃত নতুন পানীয়টি একটি তিন চাকাযুক্ত একটি বড় পিতলের পাত্রে করে ঠেলে নিয়ে যান পার্টনার ফ্র্যাংক রবিনসনের কাছে। পেমবার্টন এর আবিষ্কৃত নতুন পানীয় পান করেই রবিনসন উল্লসিত হয়ে সেই মুহূর্তেই পানীয়টির নাম দেন ‘কোকাকোলা’। উল্লেখ্য, প্রথমদিকে কোকাকোলার সাথে কোকেন মেশানোর বিষয়টি কিন্তু যথেষ্ট প্রচলিত ছিল।

প্রথমদিকের বিক্রি: প্রথম দিকে প্রতিদিন ৯ গ্লাস কোকাকোলা বিক্রি হত। প্রথম বছরে তিনি ৫০ ডলার আয় করেন কিন্তু ব্যয় হয় ৭০ ডলার। ব্যবসা সম্পর্কে পেমবার্টন খুব বেশি কৌশলী ছিলেন না। তাই তিনি তার ব্যবসায়ের সমস্ত শেয়ার একে একে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিতে থাকেন। ১৮৮৯ সালে এ.জি ক্যান্ডলার নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে তার আবিষ্কৃত পানীয়টির তৈরির ফর্মুলা-সহ সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দেন।

পেমবার্টন এর গল্পের ইতি: ক্যান্ডলারের কাছে ফর্মূলা ও শেয়ার বিক্রি করার পর ‘কোকাকোলা’র সঙ্গে পেমবার্টনের আর কোনও সম্পর্ক নেই। পেমবার্টন এর কাছ থেকে শেয়ার কেনার তিন বছর পর ক্যান্ডেলার পেমবার্টন এর অভিজ্ঞ পার্টনার রবিনসন ও আরও দুজন ব্যক্তিকে ‘কোকাকোলা কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় তাদের মূলধন ছিল ১ লাখ ডলার। ক্যান্ডেলার পেমবার্টন এর আবিষ্কৃত পানীয়তে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। তিনি এর সাথে কার্বনেটেড ওয়াটার বা কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত জল মিশিয়ে এক রসনাতৃপ্তিদায়ক পানীয় উপহার দিলেন। ক্যাণ্ডলারই প্রথম ব্যক্তি যিনি কোকাকোলাকে এতটা জনপ্রিয় করে তোলেন। ফলে নতুন স্বাদের এই ‘কোক’ বাজারে হু হু করে বিকোতে লাগল। প্রথমে গ্লাসে গ্লাসে শরবত হিসাবে বিক্রি হলেও বোতলভর্তি কোকাকোলা বিক্রি শুরু হয় ১৮৯৪ সালে। কিন্তু তার আগে তাদেরকে নতুন এই পানীয়টিতে মানুষকে অভ্যস্ত করতে বহু চড়াই-উৎরাই পেরোতে হয়েছে।

প্রথমে ফ্রি-তে খাওয়ানো হতো ‘কোক’: যাঁরা এই পানীয়টি সম্পর্কে জানতেন না, তাদেরকে জানানোর জন্য ক্যান্ডেলার ১৮৯১ সালে ক্যালেন্ডারে, পেপারে এবং নোটবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। এতেও যখন খুব বেশি লাভ না হয় তখন ক্যান্ডেলার বিপণন কর্মী নিয়োগ করেন। যাঁদের কাজ ছিল সাধারণ মানুষের কাছে ফ্রি কুপন বিলি করা। এই ফ্রি কুপন দিয়ে দোকান থেকে বিনামূল্যে কোক পাওয়া যেত। এটি ছিল ক্যান্ডেলারের ব্যবসায়িক কৌশল। যারা প্রথমবার ফ্রি-তে এই কোকাকোলা পান করেন, তারা পরবর্তীতে টাকা দিয়ে কিনে কোকাকোলা পান করতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবেই আস্তে আস্তে আমেরিকাবাসীদের কাছে কোকাকোলা জনপ্রিয় একটি পানীয়তে পরিণত হয়।

বিজ্ঞাপনেই বাজিমাৎ: শুরুর দিকে গরমের সময়ে এই সফট ড্রিংকটি ভালো বিক্রি হলেও শীতের সময়ে তা একেবারেই কমে যায়। বেশ কয়েকবছর এভাবেই চলতে থাকে। ক্যান্ডেলারের মাথায় তখন ভর করে নতুন এক কৌশল। ১৯২২-এর ডিসেম্বরে সংবাদপত্রের পুরো পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিলেন ‘থার্স্ট নোওজ নো সিজন’! চারটি শব্দের ওই বিজ্ঞাপন কয়েকবার ছাপানোর পর ম্যাজিকের মতো কাজ হল। শীতেও বিক্রি এত বাড়তে শুরু করল যে, প্রস্তুতকারকরা হিমশিম খেয়ে গেলেন।

নামকরণ ও লোগো: ‘কোকাকোলা’ নামকরণটি করেন পেমবার্টন-এর রবিনসন। cocain এবং cola nut থেকে তৈরি বলে এর নাম দেওয়া হয় কোকাকোলা। সে সময় তিনি একটু হেলানো, বাঁকা অক্ষরে একটি লোগোও তৈরি করে দেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোকাকোলার অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও নামের কোনও পরিবর্তন করা হয় নি।

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল যে দিন: আমেরিকায় জনপ্রিয় হওয়ার পর কোকাকোলা কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে তাদের এখন ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করা উচিৎ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সেই সুযোগ এনেও দেয়। আমেরিকান সৈন্যদের হাত ধরে কোকাকোলা পৌঁছে যায় ইউরোপ এবং এশিয়ায়। তারা বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে ব্যাবহার শুরু করে। বিশ্বে মায়ানমার ও সিরিয়া বাদে বাকি সব দেশেই কোকাকোলা পাওয়া যায়। পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, জিম্বাবোয়ের মতো অর্থনৈতিক সংকটপূর্ণ দেশেও কোকাকোলার দারুণ বিক্রি। তাদের রয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল। যার ফলে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন পায়ে হাঁটা দূরত্বের মধ্যই কোকাকোলা পেয়ে যাবেন। জানলে অবাক হবেন যে এই পানীয়ের ব্র্যান্ডভ্যালু এতই দৃঢ় যে ইংরেজি শব্দ ‘Kola’ পরিবর্তন হয়ে ‘Cola’ হয়ে গিয়েছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন রেসিপি: পৃথিবীতে গোপন যত বিষয় আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কোকাকোলার রেসিপি। কোকাকোলার রেসিপিটি তৈরি করেন পেমবার্টন। ক্যান্ডেলার, পেমবার্টন এর কাছ থেকে রেসিপি-সহ সম্পূর্ণ স্বত্ব কিনে নেন। যুগ যুগ ধরে অতি বিশ্বস্ত লোক ছাড়া কোকাকোলার এই রেসিপিটি সম্পর্কে কেউ জানতো না। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ৬.৬ ফুট মোটা ধাতব একটি ভল্ট বানানো হয় যেখানে কোকাকোলার রেসিপি নিয়ে কাজ করা হয়। এখানে রেসিপি সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত লোক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না। আমেরিকার ট্রাস্ট কোম্পানি অফ জর্জিয়া নামের ব্যাঙ্কের সেফ ডিপোজিট ভল্টে ‘7x’ চিহ্নিত কোকের ‘রিয়েল থিং’টি সযত্নে রাখা হয়েছে। যে দশ জন অফিসারের হাতে ফর্মুলার চাবিকাঠি রয়েছে, তাঁদের একসঙ্গে বসবাস এবং চলাফেরা নিষিদ্ধ।

কোকের যে বোতলগুলি ত্রুটিগত কারণের জন্য কোনোদিনও প্রকাশ্যে আসেনি

আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে কোকাকোলার গোপন রেসিপি: সারা বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া একটি পানীয়র গোপন রেসিপি সম্পর্কে টনক নড়ে আমেরিকার ফেডেরাল সরকারের। ১৯০৯ সালে আমেরিকার ফেডেরাল সরকার কোকাকোলার গোপন রেসিপি জানার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন। এই মামলাটি ৯ বছর ধরে চলে। অবশেষে আদালতের রায় কোকাকোলা কোম্পানির পক্ষেই যায়।

মানবদেহের ক্ষতিকর উপাদান: বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই পানীয় কোম্পানিটিকে আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হয়েছিল। ভারতের ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যাণ্ড এনভায়রনমেন্ট’ (CSE) কোকাকোলার ১২টি পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে মানবদেহ ও উদ্ভিদ দেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক, পোকামাকড় ধ্বংসকারী রসায়নিক দ্রব্যাদির মিশ্রণ এমন মাত্রায় রয়েছে যার কারণে পাকস্থলির বিভিন্ন অসুখ, দেহে খনিজ পদার্থের ঘনত্ব কমানো, স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা, জন্মকালীন বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। কোক-বটলিং প্ল্যান্টের বর্জ্যেও পাওয়া পাওয়া গেছে বিষাক্ত ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ক্যাডমিয়াম বিকল করতে পারে কিডনি। সিসার প্রভাবে শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে পারে মানসিক জড়তা ও ভয়াবহ রক্তাল্পতা!

জানেন কি?

  • এখন পর্যন্ত উৎপাদিত কোকাকোলার সবকটি বোতল যদি পাশাপাশি এক প্রান্তের সাথে আর এক প্রান্তে শেকলের মত করে রাখা হয় তাহলে অন্তত ১০০০ বার চাঁদে আসা-যাওয়ার সমান লম্বা হবে। একই ভাবে আজ পর্যন্ত উৎপাদিত হওয়া সব কোকাকোলার বোতলের চেন বানালে পুরো পৃথিবী ৪০০০ বারের বেশি ঘুরে আসা যাবে।
  • এখন পর্যন্ত উৎপাদিত কোকাকোলার সব বোতল যদি মানুষের মধ্যে বিলি করা হয় তাহলে প্রত্যেকে ১০০০ টির বেশি বোতল পাবে।
  • বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮০০০ গ্লাসেরও বেশি কোকাকোলা খাওয়া হয়ে থাকে।
  • কোকাকোলা ব্র্যান্ড কোক ছাড়াও আরো প্রায় ৩৫০০ রকমের বেভারেজ তৈরি করে। প্রতিদিন অন্তত ৩টা করে বেভারেজ খেলেও সবকটির স্বাদ নিতে আপনার ৩ বছরেরও বেশি সময় লাগবে।
  • পৃথিবীর ৯০% মানুষই কোকাকোলার লাল লোগোটি চেনেন।
  • আটলান্টা, লাস ভেগাসে শুধু কোকাকোলার জন্যই একটি করে বরাদ্দ মিউজিয়াম রয়েছে।
  • মহাকাশে স্পেস স্টেশনেও মেলে কোকের ভেন্ডিং মেশিন। সৌজন্যে নাসা!


No comments:

ফেসবুকটি বিনামূল্যে নয়

Welcome our bloge   ফেসবুকটি বিনামূল্যে নয়  আমাদের ব্লগa স্বাগতম   ফেসবুক নিখরচায় নয় ইন্টারনেটের অনেকাংশের অর্থনীতি দুটি মূল্যবান সামগ্রী...

Search This Blog

Labels